আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি দুটি বন্দুক হামলার ঘটনায় বহু প্রাণহানির ঘটনার পর দেশটিতে এই দাবি নতুন করে জোরদার হয়েছে। খবর বিবিসির।
সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজনকে ‘গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে স্বাধীনতা চাই আমি’-এমন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ‘আমাদের শিশুদের বাঁচান, আগ্নেয়াস্ত্র নয়।’ এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে অনেককেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এই বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি এ বিষয়ক একটি আইন পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে এমন আইন পাস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ রিপাবলিকানরা এর বিরুদ্ধাচরণ করবে বলে জোর ধারণা রয়েছে।
গত ২৪ মে টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুলে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ১৯ শিশু এবং দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিহত হয়। এছাড়া নিউইয়র্কের বাফেলো শহরের আরেক ঘটনায় নিহত হয় আরও ১০ জন।
এ দুটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার দাবিকে নতুন করে জোরদার করেছে। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুলে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের গঠন করা আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা বিষয়ক গোষ্ঠী ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ (এমএফওএল) শনিবার জানায় তারা দেশজুড়ে সাড়ে চারশ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোর মত শহরেও এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটি বলছে, মানুষ যখন মারা যাচ্ছে তখন রাজনীতিবিদদের ‘চুপচাপ বসে থাকতে’ দেবে না তারা।
এমএফওএল বলছে, রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমেরিকানদের মৃত্যু হচ্ছে।
পার্কল্যান্ডের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ডেভিড হগ ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইউভালডেতে শিশুদের হত্যার ঘটনার পর আমাদের ‘ক্রুদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, আমাদের পরিবর্তনের দাবি করা উচিত ছিল, সীমাহীন বিতর্ক নয় বরং এখনই পরিবর্তনের দাবি আসা উচিত।’
গত ১৪ মে মাকে হারান গারনেল হুইটফিল্ড। নিউইয়র্কের বাফালো শহরে নির্বিচার গুলিতে নিহত হন ৮৬ বছর বয়সী ওই নারী। গারনেল হুইটফিল্ড ওয়াশিংটনের জনসমাগমে বলেন, আমরা এখানে এসেছি ন্যায়বিচারের দাবিতে। আমরা এখানে তাদের সঙ্গে সমবেত হয়েছি যারা দৃঢ়তার সাথে সংবেদনশীল আগ্নেয়াস্ত্র আইনের পক্ষে।
অন্যান্য নীতি পরিবর্তনের পাশাপাশি এমএফওএল অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ, একটি জাতীয় লাইসেন্স ব্যবস্থা যেখানে বন্দুকের মালিকের নাম নিবন্ধিত থাকবে এবং অস্ত্র ক্রেতার অতীত জীবন তদন্ত করে দেখার ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।
এমএফওএল-এর প্রথম বিক্ষোভটি হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে সময় পার্কল্যান্ডের একটি স্কুলে বন্দুক হামলায় ১৪ শিক্ষার্থী ও তিন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হন।
আয়োজকরা সে সময়ে বলেছিলেন, এটা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। ওই সমাবেশে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি শনিবারের বিক্ষোভের পক্ষে আছেন। অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ এবং অতীত খতিয়ে দেখার পরিধি বাড়ানোসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই ডেমোক্রেট নেতা।
জো বাইডেন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, আমি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের প্রতি আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি, কিছু একটা করুন।