উৎসব-পার্বন, দুর্যোগ-দুর্ভোগ বা যেকোনো পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীরা থাকেন মাঠে। গণমানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে সঠিক তথ্য তুলে আনতে চলে প্রাণন্তকর চেষ্টা। তার ব্যতিক্রম হয়নি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরেও। মঙ্গলবার (৩ মে) ভোর থেকে অবিরত তারা মাঠে থেকে সব তথ্য জানাচ্ছেন।
মাঠের সংবাদকর্মীদের ঈদ আনন্দ নিয়ে জাগো নিউজের আয়োজন ‘গণমাধ্যমকর্মীদের ঈদ আনন্দ’। এ নিয়ে কথা বলেছেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিন উল হাকিম, একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার ফারজানা শোভা, এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার মুকসিমুল আহসান অপু এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্টের প্রধান প্রতিবেদক আদনান রহমান।
তারা বলছেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির চেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে সংবাদ ভাগাভাগিতেই আমাদের বেশি সময় কাটে। এই আমাদের ঈদ, এতেই আনন্দ।
এ বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিন উল হাকিম বলেন, ঈদ হোক, বড় কোনো খুশির দিন হোক, বড় কোনো দুর্যোগ হোক কিংবা যা কিছুই আসুক আমাদের কিন্তু টেলিভিশনের স্ক্রিন চালু রাখতেই হয়। কাজেই ঈদের মধ্যেও আমাদের অফিস করতে হয়। আজকেও আমার অফিস করতে হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ে একেবারে সীমান্ত সংলগ্ন দুটি বিওপিতে যাওয়ার কথা ছিল আমার। আমরা সকালে গিয়েছিলামও। কিন্তু হেলিপ্যাড থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ আজকের আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। এরপর সেখান থেকে ফিরে সারাদিন অফিসেই কাটিয়েছি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছি।

তিনি বলেন, বছরের দুটি ঈদের একটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি, আরেকটি ঈদ করি অফিসে। এভাবেই আমাদের দিন কাটে। এটা এক রকম নিয়তি বলতে পারেন। আমরা এটিকে মেনে নিয়েছি এবং উপভোগও করি। আমরা মনে করি আমাদের দায়িত্ব- সংবাদ সংগ্রহ করা এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটি যত বড় দুর্যোগের দিন হোক, কিংবা আনন্দের।
একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার ফারজানা শোভা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা গণমাধ্যমে কর্মরত আছি, ঈদটা তাদের ঘরের চাইতে অফিসে বা রাজপথেই পালন করতে হয়। কেউ এটা উপভোগ করে, কেউ চাকরির সুবাধে বাধ্য হয়ে করে।
তিনি বলেন, ঈদের প্রস্তুতি আগের দিন থেকেই শুরু করতে হয় মূলত। অফিস করে গিয়ে রাতে রান্নাবান্না করে কিছুটা গুছিয়ে রাখতে হয়। যেহেতু সকাল থেকে আবার অফিসের কর্মব্যস্ততা থাকেই। সেগুলো শেষ করে ঘুমাই। সকালে সবাই যখন ঈদের নামাজ পড়তে যায়, তখন আমরা অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই।

ঈদের দিনের কাজের হিসাব দিয়ে সাংবাদিক ফারাজানা শোভা বলেন, সারাদিন অফিস করলাম। রাষ্ট্রপতির নামাজ থেকে শুরু করে নানা ইভেন্ট কাভার করেছি। ঈদের দিনের সিংহভাগ সময়ই কাটে অফিসে। সহকর্মীরাই তো আমাদের পরিবারের অংশ। নিউজের কাজের ফাঁকে তাদের সঙ্গে যতটুকু উদযাপন করা যায়। ছবি তোলা, স্মৃতি ধরে রাখা, এই সব। দিনশেষে যখন ঘরে ফিরি, তখন ঘরের লোকদের নিয়ে ঘরোয়াভাবে ঈদ উদযাপন করা হয়।
এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার মুকসিমুল আহসান অপু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করি, বিশেষ করে টিভিতে যারা কাজ করি; আমরা সাধারণত মুসলিমদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মধ্যে একটিতে ছুটি পাই। আরেকটিতে অফিস করতে হয়। সে হিসাবে আমি এবার অফিস করছি। সুযোগ হলে ঈদুল আজহায় ছুটি কাটাবো।
তিনি বলেন, আজকে সকালে কর্মব্যস্ততা অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি ছিল। একেবারেই ভোরে অফিসে আসি। ৭টা থেকে অফিস শুরু হয়। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামায়াত কাভার করতে যাই। সেখানে লাইভ করি। পরে একটি নিউজও তৈরি করি। অফিসের কাজের ফাঁকেই বাসায় গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মামার বাসায় বেড়াতে যাই। ওখানে তাদের রেখে আবার অফিসে আসি। অফিসের কাজ শেষে করে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবো। রাতে সন্তানদের নিয়ে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যাবো। হয়তো রাত ১২/১ টার দিকে সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরবো। এভাবেই আমাদের ঈদ উদযাপন হয়।

‘সবমিলিয়ে বলা যায়, মানুষের জন্য সেবা করার যে সুযোগ সাংবাদিকতায় রয়েছে, সেটি যেমন আমরা উপভোগ করি, অন্যদিকে অনেক সময় পরিবার-পরিজনকে সময় কম দিয়ে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি না করে, দেখা যায় সংবাদটাই ভাগাভাগি করে অফিসে অনেক সময় কাটাতে হয়। এভাবে আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের ঈদ আনন্দ হয়।’ যোগ করেন মুকসিমুল আহসান অপু।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্টের প্রধান প্রতিবেদক আদনান রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সংবাদের মধ্যে, মানুষের সঙ্গেই কাটে আমাদের ঈদ। সহকর্মী, সোর্স ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে পেশাগত কারণে আমাদের ঈদ করতে হয়, করি। এতেই আমাদের আনন্দ।
তিনি বলেন, আজ (ঈদের দিন) ভোর ৬টায় উঠে সকাল পৌনে ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাই। সেখান থেকে ঈদের প্রথম জামাতের নিউজ কাভার করে যাই জাতীয় ঈদগাহে। সেখানে নামাজ আদায় করি। নামাজের পাশাপাশি নিউজ কাভার করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হই। তবে বৃষ্টিতে আটকা পড়ে ১ ঘণ্টা কাকরাইলে থাকি। এরপর সেখানে দাঁড়িয়ে কারাগারের জেল সুপারকে কল দিয়ে বন্দিদের ঈদ উদযাপন নিয়ে নিউজ করি। বিকেলের দিকে বাসায় ফিরি। এভাবেই কেটে গেছে আমার ঈদের দিন।