২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ না করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানো হলে বাড়তি নয় হাজার দুইশ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা যাবে। এসডিজির টার্গেট ৩ দশমিক ৪ অর্জনে ‘২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনার জন্য’ এই বাড়তি রাজস্ব ব্যয় করা যাবে।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ১৮ টি সংগঠন এই প্রতিবাদ জানায়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি), এইড ফাউন্ডেশন, ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিস অব সোসাইটি (ডাস), ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ), গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস, ন্যাশনাল এন্টি টিউবারকিউলোসিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নাটাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা), স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), উন্নয়ন সমন্বয়, ভয়েস, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট) ও প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করহার অপরিবর্তিত রেখে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তর অর্থাৎ চারটি স্তরেই সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র এক টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ২ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে ১১১ টাকা করা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪২ টাকা করা হয়েছে যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ হারে।
সিগারেট নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে যার প্রধান ভোক্তা মূলত দরিদ্র ও তরুণ জনগোষ্ঠী। প্রস্তাবিত বাজেটে এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ (প্রতি শলাকা ১০ পয়সা মাত্র)। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
তারা আরও বলেন, দেখা যাচ্ছে যে- মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে সিগারেটের দাম বিগত বছরের তুলনায় কমে গেছে। সঠিকভাবে কর ও মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার একটি কার্যকর ও পরীক্ষিত কৌশল হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাজেট সে লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। বরাবরের মতোই বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর কোনো প্রকার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও উৎপাদন ব্যয় ছাড়াই এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন বক্তারা।
সেগুলো হলো-
১। সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
২। অভিন্ন করভারসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন করা।
৩। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১ টাকা ২৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে নয় টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩। নিম্ন স্তরের জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বাড়ানোসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক প্রচলন করা।
প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে কী সুবিধা অর্জিত হবে সেই চিত্রও তুলে ধরেন বক্তারা।
সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। প্রায় ৯ লাখ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত করা যাবে ও প্রায় সাড়ে ৪ লাখ তরুণ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে এটি খুবই সহায়ক হবে।
২। বাড়তি নয় হাজার দুইশ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা যাবে। এসডিজির টার্গেট ৩ দশমিক ৪ অর্জনে ‘২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনার জন্য’ এই বাড়তি রাজস্ব ব্যয় করা যাবে।
৩। নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্য বেশি বাড়ালে নিম্ন আয়ের সিগারেট ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা করা যাবে। তাদের আয়ের প্রায় ২১ শতাংশ ব্যয় হয় তামাক পণ্যের পেছনে। এই অর্থ তামাক পণ্যের পরিবর্তে শিক্ষায় ব্যয় করলে তাদের সন্তানদের পড়ালেখার মোট ব্যয় ১১ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব হবে।