
‘গোয়েন্দা সংবাদ সোসাইটি’ নামে কথিত মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে প্রতারণার আঁতুড়ঘর ও একটি টর্চার সেল গড়ে তোলেন সোয়েম আহম্মেদ। বিভিন্ন সময় সোয়েমের সহযোগীরা সাধারণ মানুষের কাছে তক্ষক বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসতো। পরে তারা তক্ষক কিনতে বাধ্য করে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।
বুধবার (২০ এপ্রিল) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকা ও গাজীপুরের পুবাইল এলাকা থেকে তক্ষক কেনাবেচার সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ প্রতারককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন- সোয়েম আহম্মেদ সোহেল, এনামুল হক, হোসেন আলী, মিজানুর রহমান ও মামুন মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি গামছা, একটি প্লাস্টিকের লাঠি, নাইলন রশি, একটি ওয়াকিটকি ও একটি ফোন জব্দ করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, তক্ষক দিয়ে ক্যানসারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়, তক্ষক ঘরে থাকলে লাখ লাখ টাকা আসে, প্রতিবেশী দেশে ব্যাপক চাহিদা, মাথার ম্যাগনেটের দাম কোটি টাকা- এসব গুজবের ওপর ভর করে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধ চক্রটি নির্বিচারে তক্ষক ধরছিল। কেউ কেউ তক্ষকের কঙ্কাল বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছিল লাখ লাখ টাকা। অধিক লাভের জন্য সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিরাও এখন তক্ষক কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
‘গ্রেফতাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের কাছে তক্ষক বিক্রি করার প্রলোভন দেখাতো। পরে তাদের সোয়েম আহম্মেদের অফিসে নিয়ে যেতো। এরপর প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তক্ষক কিনতে বাধ্য করতো। ভুক্তভোগীরা তক্ষক কিনতে অস্বীকার করলে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ টাকা নিয়ে নিতো ও পরে আরও টাকা দাবি করতো। টাকা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেবে বলে ভয় দেখাতো।’
তিনি বলেন, তক্ষক, সীমান্ত পিলার, ডলার, কয়েন এগুলোর কোনো বাজারমূল্য নেই। কিন্তু প্রতারকরা সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভণ্ডামি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।
গোয়েন্দার এ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে- গ্রেফতার সোয়েম আহম্মেদের গাজীপুর জেলার পুবাইল থানাধীন পুবাইল কলেজ রেইলগেইট বাধন সড়কে কথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোয়েন্দা সংবাদ সোসাইটি নামে একটি অফিস রয়েছে। সোয়েম ওই অফিসের যুগ্ম-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।